ঘরোয়া উপায়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার ভাইরাল উপায়
কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। পদ্ধতিগুলো আপনার কম্বল দীর্ঘদিন ভালো পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। কম্বল পানি দিয়ে ওয়াশ করলে কম্বলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া, ওয়াশিং মেশিনে ধোয়ার পরিবর্তে কম্বল ড্রাই ওয়াশ অনেক ভালো পদ্ধতি। অতিরিক্ত পানি দিয়ে কম্বল ওয়াশ করা হলে কম্বলের রঙ চলে যেতে পারে।
![]() |
ঘরোয়া উপায়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার ভাইরাল উপায় |
কম্বল ড্রাই ওয়াশ করতে হলে আগে কম্বলের লেবেলে দেখুন, কম্বলটি কোন ধরনের। দীর্ঘদিন কম্বল ভালো রাখার জন্য কম্বল ড্রাই ওয়াশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বাসায় কম্বল ড্রাই ওয়াশ করলে একদিকে যেমন খরচ বেঁচে যাবে অন্য দিকে সময় বাঁচবে।
কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার সুবিধা অসুবিধা
কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। শীতের শেষে কম্বল ওয়াশ করে রাখা উচিত পরবর্তী শীতের জন্য। কম্বল ড্রাই ওয়াশ কিভাবে করলে কম্বলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হবে না। তাছাড়া, কম্বল ড্রাই ওয়াশের সুবিধা অসুবিধা বিস্তারিত দেখুন।
কম্বল ড্রাই ওয়াশের সুবিধা
- কম্বল ড্রাই ওয়াশের মাধ্যমে কম্বল দ্রুত পরিষ্কার করা যায়। শীতের সময় কম্বল ব্যবহার করতে সুবিধা হয়।
- কম্বল ড্রাই ওয়াশ করলে কম্বলের রঙ বা উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় না। কারণ কম্বলে পুরোপুরি পানি ব্যবহৃত হয় না।
- সাধারণত কম্বল ধোয়া বেশ কষ্টকর এবং অনেক সময় ওয়াশ করার পরে তা শুকাতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু ড্রাই ওয়াশ করলে সময়ের ঝামেলা কমে যায়।
- ড্রাই ওয়াশে কম্বল দ্রুত শুকিয়ে যায়। কম্বল আর্দ্রতা সংরক্ষিত হয় না এবং তা দ্রুত ব্যবহার করা যায়।
- অনেক কম্বলে এমন কিছু ফ্যাব্রিক থাকে যা পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। কম্বলের ফ্যাব্রিক খুবই সুক্ষ্ম থাকে, তাই সেগুলোর জন্য ড্রাই ওয়াশ সবচেয়ে উপযোগী।
কম্বল ড্রাই ওয়াশের অসুবিধা
- কম্বল ড্রাই ওয়াশ করলে সব ধরনের জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হতে নাও পারে। দীর্ঘদিন কম্বল ব্যবহরে ময়লা বা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে। যেমন, কম্বল পানি দিয়ে ধোয়ার ফলে সকলে জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্বল ড্রাই ওয়াশের মাধ্যমে গন্ধ পুরোপুরি দূর করা যায় না। তবে, কম্বল পানি দিয়ে ধৌত করা হলে কম্বলের দুর্গন্ধ দূর হয়।
- কম্বল ড্রাই ওয়াশ সাধারণত বেশ ব্যয়সাধ্য প্রকৃয়া। বিশেষ করে কম্বলের বড় আকারের জন্য ড্রাই ওয়াশ খরচ বেশি হতে পারে। ঘরোয়া উপায়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করে এই খরচ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
- ড্রাই ওয়াশ করা ফলে বিভিন্ন রাসায়নিকের ফলে কম্বল কিছুটা শক্ত হতে পারে। এই পদ্ধতি কিছুদিনের জন্য নরম ও আরামদায়ক কম্বল পাওয়ার অনুভূতি কমিয়ে দেয়। কয়েকদিন পর অবশ্য সেটা ঠিক হয়ে যায়।
কম্বল ড্রাই ওয়াশের সুবিধা ও অসুবিধা উভয়ই রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ও কম্বলের ধরনের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত কম্বল ড্রাই ওয়াশ কিভাবে করবেন।
ঘরোয়া উপায়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার উপায়
কম্বল শীতকালীন সময়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। শীতের সময় আমাদের জমে যাওয়া শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। তবে, শীত শেষ হলে কম্বলগুলো পরিস্কার করা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার জন্য পেশাদার দোকানে ড্রাই ওয়াস করতে দেয়া উচিত। তবে, ঘরোয়া উপায়ে কম্বল পরিষ্কার করাও বেশ সহজ এবং কার্যকরী।
ঘরোয়া উপায়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে আপনি আপনার কম্বলকে নিরাপদভাবে পরিষ্কার করতে পারবেন। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে ও নিয়ম মেনে চলতে হবে। কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
কম্বলের ধরণ নির্বাচন
কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার আগে প্রথমে কম্বলের ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। কম্বল বিভিন্ন ধরনের ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি হয় যেমন, উল কটন, পলিয়েস্টার, সিল্ক, সিনথেটিক ফাইবার ইত্যাদি। কম্বলের ধরনের উপর নির্ভর করে কেমন ড্রাই ওয়াস করবেন।
অনেক দামী কম্বল উন্নত মানের ফেব্রিক দিয়ে তৈরী হয়, তাই সেগুলো পেশাদার লন্ড্রি থেকে ওয়াশ করাতে হবে। অনেক কম্বল ড্রাই ওয়াশের দরকার হয়না, সেগুলো নরমাল পানি ও ডিটারজেন্ট দ্বারাই ওয়াশ করা যায়। কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার আগে কম্বলের ধরন নির্বাচন করুন তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার জন্য যা প্রয়োজন
বাসায় কম্বল ড্রাই ওয়াশের জন্য কিছু ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। যেমন:
- বেকিং সোডা
- কোন তরল ডিশওয়াশ
- এথানল/অ্যালকোহল
- ভিনেগার/অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
- কাপড়ের ব্রাশ
কম্বল ড্রাই ওয়াশের পূর্বে যা করতে হবে
প্রথমে কম্বলটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে যাতে আগলে ময়লা চলে যায়। জমে থাকা আগলে তন্তু বা ডাস্ট বের হয়ে যাবে। যাদের কম্বল দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হয়েছে সেইসব কম্বলে সুতা বা ময়লা জমে যেতে পারে। ঝাঁকিয়ে আগলা ময়লা বেড় করা ছাড়া কম্বলের অভ্যন্তরীণ অংশ পরিষ্কার করা উচিত না।
কিছু কিছু কম্বলের উপর "Dry Clean Only" লেখা থাকে। সেইসব কম্বল ড্রাই ওয়াশের জন্য উপযুক্ত না। সেগুলো ড্রাই ওয়াশ না করে ড্রাই ক্লিন করতে হয়। অধিকাংশ কম্বল ঘরোয়া পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা সম্ভব। তাই নিশ্চত হতে কম্বলের লেবেল চেক করে নির্ধারণ করুন।
ঘরোয়া উপায়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশের পদ্ধতি
ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে খুব দ্রত সময়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করা যায়। কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার আগে ভালো ভাবে শিখে নিতে হবে। তাছাড়া, সঠিক উপকরণ সঠিক মাত্রায় মিক্স করতে হবে। চলুন যেনে নেই কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার ঘরোয়া ভাইরাল পদ্ধতি।
বেকিং সোডা এবং লেবুর রস দিয়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ
বেকিং সোডা কম্বলের গন্ধ শোষণ করতে পারবে এবং লেবুর রস কম্বলের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। ঘরোয়া উপায় কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার জন্য এটি একটি চমৎকার পদ্ধতি। যেকোনো ধরনের কম্বল এই পদ্ধতিতে ড্রাই ওয়াশ করলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। কম্বলে বিভিন্ন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। ঘরোয়া উপায়ে এমন কিছু দিয়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করা উচিত যা দীর্ঘদিন সতেজ থাকবে।
এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রস একটি পাত্রে নিয়ে তাতে কিছুটা পানি দিন। কিছুক্ষণ নেড়ে তা ভালো ভাবে মিক্সড করা উচিত।
মিশ্রণটি কম্বলের উপরিভাগে ভালোভাবে লাগান। ২০-৩০ মিনিট রেখে দিয়ে তার পর একটি ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘসুন। ভালোভাবে ঘসার পরে একটি টিস্যু কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন এবং কিছুক্ষণ শুখাতে দিন।
শুধুমাত্র বেকিং সোডা ব্যবহার করে কম্বল ড্রাই ওয়াশ
বেকিং সোডা শুধু রান্নাঘরের কাজেই নয়, ঘরের অনেক কিছুই পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বেকিং সোডা কম্বল থেকে ময়লা, জীবাণু এবং গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে। চলুন যেনে নেই শুধুমাত্র বেকিং সোডা দিয়ে কিভাবে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করবেন।
- কম্বল ফ্ল্যাট করে বিছানায় বিছিয়ে দিন। কম্বল অনেক বড় হলে তবে মেঝেতেও বিছিয়ে নিতে পারেন।
- বেকিং সোডা সরাসরি কম্বলের উপর ছড়িয়ে দিন। সাধারণত, এক কাপ বেকিং সোডা একটি বড় কম্বল ড্রাই ওয়াশের জন্য যথেষ্ট। বেকিং সোডা কম্বলে পুরোপুরি ঢেকে দিলে ভাল হয়।
- সফট কাপড়ের ব্রাশ বা নরম ব্রাশ নিয়ে বেকিং সোডা কম্বলের উপরে রেখে ভালোভাবে ঘসুন। এটি কম্বলের উপর লেগে থাকা সকল ময়লা এবং ধুলোবালি বের করে দেবে।
- এক ঘণ্টা পরে দেখবেন বেকিং সোডা কম্বলের সকল ময়লা শোষণ করে নিবে। একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা ব্রাশ দিয়ে বেকিং সোডা ঝেড়ে ফেলুন। কম্বল ড্রাই ওয়াশ করতে শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- কম্বলটি রোদে বা বাতাসে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। সূর্যের আলো কম্বলকে তাজা এবং জীবাণুমুক্ত রাখবে।
ডিটারজেন্ট ও ভিনেগার ব্যবহার করে কম্বল ওয়াশ
কম্বল ওয়াশ করতে আরো সহজ ও প্রাকৃতিক উপায় ডিটারজেন্ট ও ভিনেগার ব্যবহার করে কম্বল ওয়াশ। এটি ড্রাই ওয়াশ না, এটি পানি দিয়ে নরমাল ওয়াশ করা হবে। বিশেষ করে যে-সব কম্বল পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায় বা ধৌত করা যায়।
প্রথমে একটি বড় বালতিতে মৃদু গরম পানি নিন। ডিটারজেন্ট ও ভিনেগার গরম পানির মধ্যে মেশান। কাস্টিল সোাপ ব্যবহার করতে পারেন, এটি তুলনামূলকভাবে নরম এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত। কাস্টিল সাবান কম্বলের জন্য নিরাপদ।
কম্বলে গন্ধ থাকলে এক কাপ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার পানির মধ্যে মেশান। এটি ময়লা ও গন্ধ দূর করবে এবং কম্বলকে তাজা রাখবে। কাস্টিল সোপ বা ডিটারজেন্ট ভিনেগার এর সাথে মিক্সড করে নিন।
কম্বল মিশ্রণে ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর হালকা চাপ দিয়ে কম্বলে জমে থাকা ময়লা বের করে দিন। এবার কম্বলটি ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পানির ভিতরে বেশি নাড়বেন না, হালকা করে নেড়ে শুধুমাত্র মিশ্রনটি ছাড়াবেন।
কম্বলটি সোজা বিছিয়ে রোদে শুকাতে দিন। কম্বল প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকাবে। সম্পূর্ণভাবে শুকানো না হলে গন্ধ থাকতে পারে, তাই ভালো ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
বেকিং সোডা ও ভিনেগার দিয়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ
বেকিং সোডা এবং সাদা ভিনেগার কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার জন্য দারুন একটি ঘরোয়া পদ্ধতি। কম্বল দীর্ঘদিন গায়ে দিলে কিছুটা গন্ধ হয়ে যায়। কম্বলের গন্ধ দূর করতে এবং পরিষ্কার করতে বেকিং সোডা এবং সাদা ভিনেগার সাহায্য করে।
১/২ কাপ বেকিং সোডা এবং ১/২ কাপ সাদা ভিনেগার একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রনটি মিশিয়ে কম্বলের উপর লাগিয়ে নিন।
২০-৩০ মিনিট রেখে নরম ব্রাশ দিয়ে স্ক্রাব করুন। খেয়াল রাখবেন কম্বলের ভিতরে যেনে বেশি পানি না ঢুকে। কিছুক্ষন শেষে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
এথানল বা অ্যালকোহল ব্যবহার করে কম্বল ড্রাই ওয়াশ
এথানল বা অ্যালকোহল দিয়ে কম্বল পরিষ্কার করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। অ্যালকোহল দিয়ে কম্বল ড্রাই ওয়াশ করা যায়, যা চমৎকার ড্রাই ওয়াশের মতো কাজ করে।
কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার জন্য একটি স্প্রে বোতলে অল্প পরিমাণ এথানল বা অ্যালকোহল নিন। এটি ভালো করে কম্বলের উপর স্প্রে করুন। এথানল খুব দ্রুত জীবাণু ও দুর্গন্ধ দূর করতে পারে, পাশাপাশি কম্বল খুব দ্রুত পরিষ্কার করে।
অ্যালকোহল যেহেতু খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় তাই খুব দ্রুত পরিষ্কার স্পঞ্জ দিয়ে কম্বলের উপর ভালোভাবে মুছে নিন। এথানল দামী ফেব্রিক এর ময়লা ও গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
কম্বল ড্রাই ওয়াশের সতর্কতা
কম্বলের কোনো লেবেলে যদি লেখা থাকে "ড্রাই ক্লিনিং" তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পরিষ্কার না করাই ভালো। সিল্ক বা উলের কম্বল নিয়ে ড্রাই ওয়াশ এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভালো। এগুলোতে রাসায়নিক ব্যবহারে কম্বলের ক্ষতি হতে পারে। কম্বল ড্রাই ওয়াশ করার আগে পেশাদার কারো থেকে পরামর্শ নিন তারপর বাসায় করুন।